ভাল কথা বলাও যে ইবাদত, শতকরা কতজন আবেদের সে বোধ রয়েছে ?

ভাল কথা বলাই হচ্ছে নসিহত করা। নসিহতের মাধ্যমেই ভাল কথাগুলো জানা যায়। অধিকাংশ মানুষ ভাল বিষয়গুলো না জেনেই খারাপ কাজ বা অন্যায় করে থাকে। তাই সক্রেটিস বলেছেন,“অধিকাংশ মানুষ অন্যায় করে থাকে অজ্ঞতাবশতঃ।” যেমন মিমাংসা করা একটি ভাল কাজ, সৎ কাজে সাধ্যমত সাহায্য করা একটি ভাল কাজ, সুযোগমত সৎ কাজে উপদেশ দেয়া একটি ভাল কাজ, একতাবদ্ধ হওয়া একটি ভাল কাজ। ভাল কাজ তথা সৎ কাজের মধ্যে আলো রয়েছে। অসৎ কাজের মধ্যে অন্ধকার রয়েছে।

মিমাংসা করা একটি সৎ কাজ আর মামলা করা একটি অসৎ কাজ। মিমাংসা করার মধ্যে আলো রয়েছে আর মামলা করার মধ্যে রয়েছে অন্ধকার। লক্ষ নামাযীর মধ্যে কতজন খুঁজে পাওয়া যাবে যারা দিনে দু’মিনিট সময় ধরে মিমাংসার বিষয় নিয়ে আলাপ- আলোচনা করে থাকেন? হাজার মসজিদের মধ্যে কতটি মসজিদে ২৪ ঘন্টায় ৪ মিনিট সময় ধরে মিমাংসার গুরুত্ব আলোচনা করা হয়ে থাকে, মিমাংসার বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়ে থাকে? এভাবে মিমাংসার বিষয়টি কোন তাফসীরুল কোরআনের মাহফিলে ও আলোচনায় প্রাধান্য না পাওয়ার কারণে আমরা মামলা করে থাকি অহরহ যা হচ্ছে অন্যায়।

আমার জানামতে, কোন এক মসজিদের ইমাম সাহেবকে জানানো হয়েছে –ভাইয়ে ভাইয়ে বিদ্যমান ঝগড়া মিটানোর জন্য। ইমাম সাহেব ঝগড়া মিটানোর কোন উদ্যেগ গ্রহন করেন নি। বরং বলেছেন - তোমরা কোর্ট-কাছারী দেখতে পাও না? এভাবে অনেক ইমাম সাহেবকে দেখা যায় তারা অনেক সময় আল্লাহর হুকুমের বিপরীত কাজটি করার পরামর্শ ও দিয়ে থাকেন যা ইমামের কাজ নয়- ইবলিশের কাজ।

  • আমরা ৯৯% নিয়মিত নামাযীগণই জানি না যে, নামায পড়ার যতটা গুরুত্ব, ঝগড়া-বিবাদ মিমাংসা করে দেয়া কিংবা মিমাংসা করে নেয়ার ও অনুরূপ গুরুত্ব রয়েছে। তাই আমরা মিমাংসার কোন উদ্যেগ গ্রহন না করে মামলা করে থাকি। শতকরা কতটি মসজিদের ইমাম সাহেব ২৪ ঘন্টায় ৪মিনিট সময় ধরে আমাদেরকে ঝগড়া-বিবাদ মিমাংসা করে দেয়া কিংবা মিমাংসা করে নেয়ার গুরুত্ব বুঝিয়ে থাকেন, তাগিদ দিয়ে থাকেন ?
ঝগড়া-বিবাদ মিমাংসা করে দেয়া কিংবা মিমাংসা করে নেয়ার মধ্যেই আলো রয়েছে। আলোর অভাবেই সে জায়গাটা অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তাই মিমাংসার অভাবেই মামলা রুজু হয়ে থাকে। মিমাংসার অভাবেই মারামারি হয়ে থাকে। আগুন নিভাতে যেমনঃ পানি জরুরী, মামলার হার কমাতে মিমাংসার আলোচনা জরুরী। তাই আমি মসজিদে মিমাংসার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে আলোচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।

মসজিদে মিমাংসার গুরুত্ব যত বেশী বেশী আলোচনা করা যাবে, কোর্ট-কাছারী থেকে তত মামলার হার কমে যাবে। কোন এক বিচারককে বলেছিলাম- স্যার মামলার বিচার করে আপনারা বিচারকগণ মামলার হার কমাতে পারবেন না। আগুন দিয়ে কখনও আগুন নিভানো যায় না। এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে আমি শতাধিক প্রবন্ধ লিখেছি। অনেক প্রবন্ধ পয়সার অভাবে কম্পোজ ও করতে পারিনি।

আমরা ৯৯% নামাযীগণই জানি না যে, নামায পড়ার যতটা গুরুত্ব রয়েছে, সৎ কাজে সাধ্যমত সাহায্য করারও অনুরূপ গুরুত্ব রয়েছে। তাই আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়লেও সৎ কাজে সাধ্যমত সাহায্য করার বিষয় আলোচনাও করি না। আমার আবেদন হচ্ছে- মসজিদে সৎ কাজে সাধ্যমত সাহায্য করার গুরুত্ব বেশী বেশী আলোচনা করে সমাজে সৎ কাজের প্রসার ঘটাতে হবে।

আমরা ৯৯% নিয়মিত নামাযীগণই জানি না যে, নামায পড়ার যতটা গুরুত্ব রয়েছে - সৎ কাজে সুযোগমত উপদেশ দেয়ার ও অনুরূপ গুরুত্ব রয়েছে। অর্থাৎ নামায পড়া যেমন ইবাদত, সৎ কাজে সুযোগমত উপদেশ দেয়াও তেমনি ইবাদত। ভাই-ভাল কথা বলতে তো মুখ ব্যথা হওয়ার কথা নয়। বাংলার আবেদগণ যেন আমরা ভাল কথা বলতেও মুখে ব্যথা পাই। আবার আমরা ভাল কথা বলতে অনেকে ভয়ও পাই। যেমন আমার ছেলে ও অন্যায় করলে আমরা অনেক সময় তার প্রতিবাদ করি না। আমি পরহেজগার- মুত্তাকী অথচ আমার পুতনী আমার সামনে জিনসের প্যান্ট ও গেঞ্জি পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে রওয়ানা দিচ্ছে। হয়তোবা আমি সে গাড়ীতে উঠে পরিবহনে উঠার জন্য সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আসছি। মনে কত আনন্দ আমার পুতনির সঙ্গে গল্প করতে করতে আসলাম।

সৎ কাজে উপদেশ দিতে না পারলে মানুষকে সচেতন করা যাবে না। আর সচেতনতা ছাড়া সৎ কাজে সফলতা আসবে না। সচেতনতা কার্য্যক্রমটি সাময়িক নহে, এটা হচ্ছে সার্বক্ষণিক। সার্বক্ষণিকভাবে এ কার্যক্রমটি চালানোর জন্য আমি মসজিদ/মন্দির/গির্জাকে কাজে লাগানোর পরামর্শ প্রদান করেছি। কেননা আমরা যখন মসজিদে যাই তখন মনটা একটু নরম থাকে। নরম কাদায় যে রকম সহজে ছাপ পড়ে, নরম মনেও মোটিভেশন কার্যকরী হয়। অর্থাৎ সকল ধরনের সৎ কাজের মোটিভেশন অব্যাহতভাবে মসজিদ কিংবা মন্দির থেকে দিতে হবে।

সৎ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনা। নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনার জন্য যে প্রযুক্তিগুলো বিদ্যমান তন্মধ্যে পি,এস,এফ অন্যতম। নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনার সে প্রযুক্তি নিশ্চয় জ্ঞানের একটি অধ্যায়। মহানবী (সাঃ ) এরশাদ করেন, “ যে ব্যক্তি জ্ঞানের একটি অধ্যায় ও নিজে শিখে এবং অন্যকে শিক্ষাদান করে, তাকে সত্তরজন নবী ও সিদ্দিকীনের সওয়াব দান করা হবে।”

নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনার এ পি,এস,এফ প্রযুক্তিটি আমার জানামতে এখনও সাহিত্য আকারে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মাদ্রাসার সিলেবাসে সংযুক্ত হয়নি। আমি একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী হয়েও নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনার উপর রাত জেগে চিন্তা-ভাবনা করে চলেছি এবং সাহিত্য লিখেও চলেছি।

আমাদের স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে জ্ঞান সীমাহীন। দুনিয়ার সকল জ্ঞানী ব্যক্তিগণই স্বীকার করেছেন-আমি যা জানি তার চেয়ে অনেক, অনেক রয়েছে অজানা। একজন চিকিৎসক যেমন সকল রোগের সুচিকিৎসক নন, তেমনি একজন প্রকৌশলী ও সকল ধরনের প্রযুক্তি জানেন না। সাধারন শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের তো প্রযুক্তি জানার কথা নয়।

নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনার এ পি,এস,এফ প্রযুক্তিটিকে সার্বজনীন করতে আমি সাহিত্য রচনা করার কাজে হাত দিয়েছি। নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনার বিষয়টি একটি সামাজিক কাজ বিধায় আমি সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টিকে আমার লেখায় প্রাধান্য দিয়েছি। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা না গেলে সামাজিক কাজে সফলতা লাভ করা যায় না। সচেতনতা বৃদ্ধিতে সদুপদেশ দিতে হবে। সচেতনতা ছাড়া ও সৎ কাজে সফলতা আসে না। কেননা যারা সচেতন তারাই সচেষ্ট।

আমাদের স্মরণে রাখতে হবে যে, নামায-রোযা পালন করা যেমন ইবাদত, নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি পি,এস,এফ এ কমিটি গঠনে উপদেশ দিয়ে নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাও তেমনি ইবাদত। অথচ আমরা ৯৯% নিয়মিত নামাযীরা ও জানি না যে, নামায পড়ার যতটা গুরুত্ব রয়েছে, নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনায় মানুষকে পরামর্শ দেয়ায় ও তদপেক্ষা বেশী গুরুত্ব রয়েছে।

আমাদের স্মরণে রাখতে হবে যে, যে বিষয় যত গুরুত্বপূর্ন, সে বিষয় তত বেশী বেশী আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। লক্ষ্য করা গেছে সাধারন বিষয়ও বার বার আলোচনা করলে তার গুরুত্ব বেড়ে যায়, পক্ষান্তরে অতীব গুরুত্বপূর্ন বিষয়ও আলোচনার অভাবে, তাগিদের অভাবে গুরুত্ব কমতে থাকে। একসময় অপ্রয়োজনীয় ও মনে হতে পারে।

নিরাপদ পানির অপর নাম জীবন। দৈনন্দিন জীবনে তথা ২৪ ঘন্টায় আমরা শতকরা কত জনে আমাদের কথাবার্তায় চার মিনিট সময় ধরে নিরাপদ পানির গুরুত্ব আলোচনা করে থাকি ? যা আলোচনায় নেই তা কি করে আমলে আসে? আমাদের যাদের বোধ রয়েছে, তারা জীবন বাঁচাতে যে ধরণের প্রচেষ্টা করে থাকি সে রকমই প্রচেষ্টা করতে হবে নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে।

কথায় বলে আলোচনায় বিবেচনা বাড়ে, বিবেচনায় এক সময় বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। কেননা কলতলায় কলসী রাখতে রাখতে দেখা যায়, কলের গোড়া পাকাস্থান ও পাথর হয়ে যায়, তবে কেন বার বার বলতে বলতে বাস্তবায়ন হবে না ?

জ্ঞান চর্চা করেই জানা যাবে, নামায- রোযা পালন করা যেমন ইবাদত, তেমনি ইবাদত হচ্ছে নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনায়। পি,এস,এফ সচল রাখার জন্য সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে প্রতিটি পি,এস,এফ এ কমিটি গঠন করা। কেননা আগুন নিভাতে যেমন পানি জরুরী, পি,এস,এফ সচল রাখতে ও সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে প্রতিটি পি,এস,এফ এ কমিটি গঠন জরুরী।

তাই আসুন আমরা সকল দলমত ভূলে গিয়ে প্রতিটি মসজিদ থেকে শ্লোগান দেই- আগুন নিভানো যেমন জরুরী- পি.এস.এফ সচল রাখা ও তেমনি জরুরী। আগুন নিভানোর প্রযুক্তি যেমন পানি, পাত্র ও পরিবেশন করা – পি,এস,এফ সচল রাখার প্রযুক্তি হচ্ছে কমিটি, কন্ট্রিবিউশন ও নিয়মিত (পুকুরের পানি ঘোলা হলে সপ্তাহে একবার এবং পুকুরের পানি স্বচ্ছ হলে প্রতি মাসে একবার ) বালু পরিস্কার করা।

নামায পড়ার ক্ষেত্রে আমরা যতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকি, যার যার অবস্থান থেকে সে রকমই গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করতে থাকি- নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে। কেননা আমাদের ভূলে গেলে চলবে না, নিরাপদ পানির অপর নাম জীবন। মহান আল্লাহপাক আমাদের সহায় হউন! আমীন!
সংশোধন (০১-১২-০৮ )
প্রনয়ণে-প্রকৌশলী মোঃ আজিজুর রহমান,জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, মোরেলগজ্ঞ, বাগেরহাট। (১৫-৯-০৮)

0 comments: