আমরা কেউবা সওয়াব অর্জনে সচেষ্ট, কেউবা সিলেবাস বাস্তবায়নে ব্যস্ত, আমাদেরকে সৎ কাজ কায়েমে করতে হবে কষ্ট তথা জিহাদ করতে হবে

0 comments

বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ। ৩৭ বছর হল আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। অথচ আজ পর্যন্ত আমরা অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারিনি। আমরা শিশুর মত স্বাধীনতালাভ করেছি। শিশুকে স্বাধীনতা দিলে ও সে যেমন স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করতে সক্ষম নয়, কেননা সে অবুঝ তথা নির্বোধ। আমরা ও বর্তমান সময়ের বাংলার শিশু মুসলমানগণ সে স্বাধীনতার মূল্য বুঝিনি।

মুসলমানদের কাজ হচ্ছে সৎ কাজকে প্রতিষ্ঠিত করে অসৎ কাজকে প্রতিরোধ করা। কেননা সৎ কাজের মধ্যে আলো রয়েছে আর অসৎ কাজের মধ্যে রয়েছে অন্ধকার। অন্ধকারের কোন ক্ষমতা নেই, ক্ষমতা রয়েছে আলোর। যে ঘরে আলো ঢোকার সুযোগ পায় না সে ঘরটি দিনের বেলায় ও থাকে অন্ধকার। আলো ধরাতে পারলে যেমন অন্ধকার দূরে যেতে বাধ্য তেমনি মিমাংসা করে দিতে পারলে আর মামলা হবে না। আমরা আমাদের আলাপ-আলোচনায় আলো সদৃশ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য না দেয়ায় সমাজে এত বিশৃঙ্খলা। যেমন মিমাংসার মধ্যে আলো রয়েছে।

মিমাংসার বিষয়টিকে আমরা আমাদের আলাপ-আলোচনায় যত প্রাধান্য দিতে পারব কোর্ট-কাছারী থেকে তত মামলা কমে যাবে। তাই আমি বলছি মিমাংসা করে মামলা প্রতিরোধ করা যাবে। কেননা মিমাংসার মধ্যে আলো রয়েছে। মহানবী (সাঃ ) দুনিয়ায় এসেছিলেন এই আলোর দাওয়াত নিয়েই। কাজেই আলিমদের দায়িত্ব এই আলোর দাওয়াত দেয়ার। অর্থ্যাৎ যে কাজের মধ্যে আলো রয়েছে সে কাজগুলোরই বিষয় বয়ানে প্রাধান্য দিবেন বক্তাগণ। ঐ কাজগুলোকে আমি পাজামার সঙ্গে তুলনা করেছি।

সৎ কাজের দ্বারাই স্বাধীনতা অর্থবহ হবে। সৎ কাজের দ্বারাই সমাজে শৃঙ্খলা আসবে, দেশে সমৃদ্ধি আসবে। সওয়াবের দ্বারা নয়। আমি মাত্র পাঁচটি সৎ কাজের কথা বয়ান করে চলেছি। দোয়া-দরুদ পাঠ করে সওয়াব অর্জন করা, আর সৎ কাজ করা এক কথা নয়। সৎ কাজ বাস্তবায়নের জন্য দোয়া করা দরকার, চেষ্টা করা জরুরী, যেমন সন্তানলাভের জন্য মোনাজাত করা দরকার, বিয়ে করা জরুরী।

বিয়ে না করে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করা, আর চেষ্টা না করে সৎ কাজ বাস্তবায়নে বয়ান করা এক কথা। মুসলমানদের কোন মজলিশে সৎ কাজ বাস্তবায়নের গুরুত্ব আলোচনা করা হয় কি? সৎ কাজে সাধ্যমত সাহায্য করায় প্রেরনা প্রদান করা হয় না।এমনকি সৎ কাজে সুযোগমত উপদেশ দেয়ারও কোন তাগিদ নেই। যা আছে তা হচ্ছে পাঁচ নম্বরে, পাস নম্বরে ও নহে।

মুসলমানদের সমাজ-সভ্যতার উন্নয়নে মসজিদ তৈরী করা হলে ও মসজিদে সমাজ উন্নয়নের কোন কথা নেই। আছে সওয়াব অর্জনের কথা, আছে দলের উন্নয়নের কথা। সৎ কাজ কি করে বাস্তবায়ন হবে সে বিষয়ে কোন কথা কখনও শুনেছেন কি? অথচ সৎ কাজের দ্বারাই সমাজের উন্নয়ন হয়ে থাকে। সমঝোতা ছাড়া সৎ কাজ বাস্তবায়ন করা যায় না। স্বার্থত্যাগ ছাড়া সৎ কাজ বাস্তবায়ন করা যায় না। সমবেত হওয়া ছাড়া সৎ কাজ বাস্তবায়ন করা যায় না। একা একা কখনও সৎ কাজ বাস্তবায়ন করা যায় না।

সৎ কাজ বাস্তবায়নে, সৎ কাজটি কাউকে না কাউকে শুরু করতে হবে। অতঃপর সে সৎ কাজে অন্য সকলকে সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে, যদি তারা মুমিনের কাতারে দাড়াতে চান। সমাজের সকল সৎ লোককে সৎ কাজে পরস্পর পরামর্শ ও দিতে হবে যদি তারা মুমিনের কাতারে দাড়াতে চান।

মসজিদে নববীতে এ ধরনের কার্যক্রম ছিল। কিন্তু আমাদের তৈরী মসজিদগুলোতে আছে সওয়াব অর্জনের আলোচনা এবং তারা সওয়াব অর্জনে সচেষ্ট, তেলাওয়াতে তৃপ্ত সৎ কাজে উপদেশ দিতে ও ওনাদের কষ্ট। কিছু কিছু মসজিদে আছে দলের উন্নয়নের আলোচনা। তারা দলের সমর্থনে দলিল পেশ করে থাকেন। উদ্দেশ্য থাকে কি করে দলে ভিড়ানো যায়। এরা সিলেবাস বাস্তবায়নে ব্যস্ত। আমাদেরকে দ্বীন কায়েমে কষ্ট করতে হবে তথা জিহাদ করতে হবে। সৎ কাজ বাস্তবায়নই হচেছ দ্বীন। সৎ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পি,এস,এফ সচল রাখা।

আমি সকল দলের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি আপনারা যার যার অবস্থান থেকে দিন-রাত ২৪ ঘন্টায় অন্ততঃ ৪ মিনিট সময় ধরে পি,এস,এফ সচল রাখার বিষয়ে জনগণকে নসিহত করতে থাকুন। মহান আল্লাহপাক আমাদের সহায় হউন! আমীন!

প্রনয়ণে প্রকৌশলী মোঃ আজিজুর রহমান,জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, মোরেলগঞ্জ,বাগেরহাট (রচনার সময়ঃ ৩০-১০-২০০৮)

আমি কেন সাহিত্য চর্চা শুরু করলাম ?

0 comments

আমার পেশা হচ্ছে ওয়াটার- স্যানিটেশন। ওয়াটার- স্যানিটেশন হচ্ছে সামাজিক কাজ ও মানবিক কাজ। সামাজিক কাজে সফলতা লাভের জন্য সামাজিক আন্দোলন জরুরী। সামাজিক আন্দোলন করতে সাহিত্য জরুরী । সাহিত্যই পারে একটি সমাজ সংস্কার করতে। স্যানিটেশন ও সংস্কার ভাষা ভিন্ন, কাহিনী কিন্তু এক, –বলেছিলেন পাটকেলঘাটার জনৈক এ,জি,এম-পল্লীবিদ্যূৎ। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে নজরুলের কবিতা এবং রবীন্দ্রনাথের গান কত প্রেরনা প্রদান করেছিল তা বলে বা লিখে শেষ করা যাবে কি ? আমরা মুখে স্বীকার করছি স্যানিটেশনে সামাজিক আন্দোলন করা জরুরী। অথচ এ সামাজিক আন্দোলনে সহযোগিতা করতে কোন পত্রিকা এ স্যানিটেশন মাসে ও একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে কি ? স্বভাবতঃই প্রশ্ন জাগতে পারে- সামাজিক কাজের দায়িত্ব কার? সামাজিক কাজের দায়িত্ব সকল সচেতন ব্যক্তির। সচেতন ব্যক্তিই সুশিক্ষিত। সুশিক্ষিত ব্যক্তি নিজে সচেতন এবং অন্যকে সচেতন করার জন্য ও তিনি সচেষ্ট।

কোন দোকানে যেমন সকল পণ্য পাওয়া যায় না, তদ্রুপ কোন শিক্ষক ও সকল বিষয়ে সচেতন নন। সচেতন হওয়ার জন্য সনদপত্র জরুরী নয়, জরুরী হচ্ছে সচেতনতাবোধ। সচেতনতাবোধ বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। একখন্ড চুম্বকের সংস্পর্শে যেমন একটি আলপিন চুম্বকের গুণ অর্জন করতে পারে, তেমনি একজন সচেতন ব্যক্তির সোহবতে ও একজন নিরক্ষর ব্যক্তি সচেতন হতে পারে।

আমার সমস্ত লেখনীর লক্ষ্য হচ্ছে কি করে বাংলার জনগণকে সচেতন করা যায়- বিভিন্ন বিষয়ে। কেননা আগুন নেভাতে যেমন পানি জরুরী, সামাজিক কাজে সফলতার জন্য জনগণকে সচেতন করা জরুরী। গতকল্য রূপান্তর এন, জি,ও কর্তৃক আয়োজিত এক সেমিনারে এন, জি,ও কর্তৃপক্ষ তাদের আলোচনায় বলেছিলেন- আমাদের মূল কাজ সচেতনতামূলক কার্য্যক্রম। আমাদের জনগণ অসচেতন, তা এন, জি,ও কর্তৃপক্ষ বুঝে তারা আমাদের জনগণকে সচেতন করায় সচেষ্ট। অথচ আমাদের জনগণকে সচেতন করার শ্রেষ্ঠ স্থান হচ্ছে মসজিদ, সে মসজিদে সচেতনতামূলক কার্য্যক্রম নেই, আছে সওয়াব অর্জনের কার্য্যক্রম। অর্থাৎ আমরা সওয়াব অর্জনে সচেষ্ট- এন,জি,ও রা সচেতনতা কার্য্যক্রমে সচেষ্ট।

কিছুদিন আগে আশাশুনি উপজেলায় আমার আত্মীয়ের বাড়ী থেকে ভ্যানে করে ফিরছিলাম। পথে ভায়রার ভাইপোকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম-আজাদ প্রাচীর দেয়া এত সুন্দর বাড়ীটি কার? জবাবে আজাদ আমাকে জানাল -–খালু এ কারও বাড়ী নয়, এটি হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি সেবাশ্রম। তখন আমি বলে ফেললাম-মুসলমানগণ সওয়াব অর্জনে সচেষ্ট—অমুসলমানগণ সেবা দিতে ব্যস্ত। যে ভ্যানে করে ফিরছিলাম- সে ভ্যানওয়ালা তখন বলছিল-আপনি ঠিকই বলেছেন মুসলমানগণ ধর্ম নিয়ে ব্যস্ত আর অমুসলমানগণ কর্ম নিয়ে ব্যস্ত।

অথচ ইসলাম ধর্ম সৎ কর্মেরই দাওয়াত নিয়ে এসেছিল। কেননা সৎ কর্মের মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ। মহানবীর (সাঃ) ধর্মের দাওয়াতে ছিল কর্মের দাওয়াত। মহান আল্লাহপাক ও ঘোষণা করেন,“মানব জাতির কল্যাণের জন্য তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে।” নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চয় একটি সৎ কাজ। এ সৎ কাজের গুরুত্ব মসজিদ থেকে আলোচনা করতে যারা সুযোগ করে দিতে গাফিলতি করেন তারা কি বিজ্ঞ না বে- আক্কল ?

আমি বলতে চাই- সওয়াব (দোয়া দরুদ পাঠ করে কিংবা মিলাদ পড়ে ) অর্জন করা দরকার, সৎ কাজে উপদেশ দেয়া জরুরী। সওয়াব অর্জনের মূল্য হচ্ছে এক টাকা, আর সৎ কাজে উপদেশ দেয়ার মূল্য হচ্ছে লক্ষ টাকা। সওয়াব অর্জনের মূল্য হচ্ছে মার্বেলতুল্য, সৎ কাজে উপদেশ দেয়ার মূল্য হচ্ছে মূক্তাতুল্য।

শিশু যেমন মুক্তার তুলনায় মার্বেলে তৃপ্ত, বাংলার শিশু মুসল্লীগণ নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনার মত সৎ কাজে উপদেশ দিতে দু’মিনিট সময় ব্যয় করার তুলনায় সূরা হাশর পাঠ করে সওয়াব অর্জনে সচেষ্ট। যারা সওয়াব অর্জনে সচেষ্ট, তেলাওয়াতে তৃপ্ত এবং সনদপত্রে সন্তষ্ট অথচ সৎ কাজে উপদেশ দিতে ও যাদের কষ্ট- ওনারা এম,এ/কামিল/ইমাম হলে ও ওনাদের ধর্ম-কর্মে শয়তান হচ্ছে সন্তষ্ট।

আমি আমার লেখনীতে সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কেননা সচেতনতা হচ্ছে বড় সম্পদ, সচেতনতা হচ্ছে বড় শক্তি। যে সমাজে সচেতন ব্যক্তির সংখ্যা যত বেশী, সে সমাজ তত সুসভ্য, সে জাতি তত উন্নত, সে দেশ তত সমৃদ্ধ।কাজেই দেখা যাচ্ছে সু-সভ্য সমাজ গড়তে সচেতন মানুষ জরুরী। সমৃদ্ধ দেশ গড়তে ও জরুরী হচ্ছে সচেতন মানুষ। আমি আমার লেখনীতে আহ্বান জানিয়েছি-মসজিদে জ্ঞান চর্চা করে সমাজে সচেতন ব্যক্তির সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমি আমার লেখনীতে আরও উল্লেখ করেছি সওয়াব অর্জন করা দরকার, সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরী। সচেতনতা হচ্ছে বালতির তলা। তলাবিহীন বালতি যেমন কোন দিন কোন বস্তু দিয়ে ভরা যাবে না, সচেতনহীন জনগোষ্ঠীর পি,এস,এফ মেরামত করে দিয়ে ও কোন দিন সচল রাখা যাবে না।

তাই আমি বলতে চাই- জিকির করা দরকার, সূরা হাশর তেলাওয়াত করে সওয়াব অর্জন করা দরকার, জনগণকে সচেতন করে পি,এস,এফ সচল রাখা জরুরী। সূরা হাশর তেলাওয়াত করা হচ্ছে মাথায় টুপির উপর পাগড়ী পরা আর পি,এস,এফ সচল রাখার জন্য জিহাদ করা হচ্ছে পরণে পাজামা পরা।

আমরা যারা তাবলীগ করছি তারা কি পি,এস,এফ সচল রাখার মত সৎ কাজটি বাস্তবায়নে দিনে দু’মিনিট সময় ধরে প্রচার করছি ? তাগিদ দিচ্ছি? আমরা যারা ইসলামের সৈনিক তথা জিহাদে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত তারা পি,এস,এফ সচল রাখার মত সৎ কাজটি বাস্তবায়নে প্রানপণ প্রচেষ্টা করছি কি? তাগিদ দিচ্ছি কি? আমরা যারা যমানার মোজাদ্দেদ পীরসাহেবের খাস মুরিদান, চোখ বুজঁলে নূর দেখি, কল্ব জারী, তারা তাদের বাড়ীতে কিংবা মুর্শিদের দরবারে পি,এস,এফ সচল রাখার মত সৎ কাজটি বাস্তবায়নে দিনে দু’মিনিট সময় ধরে আলোচনা করে থাকি কি? তাগিদ দিয়ে থাকি কি?

তাই আসুন আমরা সকল দল ও মত ভূলে গিয়ে কিংবা যে দলেই আপনার অবস্থান হোক না কেন আপনাদের সিলেবাসে আমার এ পাঁচটি বিষয় যোগ করে নিন।
প্রনয়ণেঃ- প্রকৌশলী মোঃ আজিজুর রহমান,জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, মোরেলগঞ্জ,বাগেরহাট(১৬-১১-০৮)

ভাল কথা বলাও যে ইবাদত, শতকরা কতজন আবেদের সে বোধ রয়েছে ?

0 comments

ভাল কথা বলাই হচ্ছে নসিহত করা। নসিহতের মাধ্যমেই ভাল কথাগুলো জানা যায়। অধিকাংশ মানুষ ভাল বিষয়গুলো না জেনেই খারাপ কাজ বা অন্যায় করে থাকে। তাই সক্রেটিস বলেছেন,“অধিকাংশ মানুষ অন্যায় করে থাকে অজ্ঞতাবশতঃ।” যেমন মিমাংসা করা একটি ভাল কাজ, সৎ কাজে সাধ্যমত সাহায্য করা একটি ভাল কাজ, সুযোগমত সৎ কাজে উপদেশ দেয়া একটি ভাল কাজ, একতাবদ্ধ হওয়া একটি ভাল কাজ। ভাল কাজ তথা সৎ কাজের মধ্যে আলো রয়েছে। অসৎ কাজের মধ্যে অন্ধকার রয়েছে।

মিমাংসা করা একটি সৎ কাজ আর মামলা করা একটি অসৎ কাজ। মিমাংসা করার মধ্যে আলো রয়েছে আর মামলা করার মধ্যে রয়েছে অন্ধকার। লক্ষ নামাযীর মধ্যে কতজন খুঁজে পাওয়া যাবে যারা দিনে দু’মিনিট সময় ধরে মিমাংসার বিষয় নিয়ে আলাপ- আলোচনা করে থাকেন? হাজার মসজিদের মধ্যে কতটি মসজিদে ২৪ ঘন্টায় ৪ মিনিট সময় ধরে মিমাংসার গুরুত্ব আলোচনা করা হয়ে থাকে, মিমাংসার বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়ে থাকে? এভাবে মিমাংসার বিষয়টি কোন তাফসীরুল কোরআনের মাহফিলে ও আলোচনায় প্রাধান্য না পাওয়ার কারণে আমরা মামলা করে থাকি অহরহ যা হচ্ছে অন্যায়।

আমার জানামতে, কোন এক মসজিদের ইমাম সাহেবকে জানানো হয়েছে –ভাইয়ে ভাইয়ে বিদ্যমান ঝগড়া মিটানোর জন্য। ইমাম সাহেব ঝগড়া মিটানোর কোন উদ্যেগ গ্রহন করেন নি। বরং বলেছেন - তোমরা কোর্ট-কাছারী দেখতে পাও না? এভাবে অনেক ইমাম সাহেবকে দেখা যায় তারা অনেক সময় আল্লাহর হুকুমের বিপরীত কাজটি করার পরামর্শ ও দিয়ে থাকেন যা ইমামের কাজ নয়- ইবলিশের কাজ।

  • আমরা ৯৯% নিয়মিত নামাযীগণই জানি না যে, নামায পড়ার যতটা গুরুত্ব, ঝগড়া-বিবাদ মিমাংসা করে দেয়া কিংবা মিমাংসা করে নেয়ার ও অনুরূপ গুরুত্ব রয়েছে। তাই আমরা মিমাংসার কোন উদ্যেগ গ্রহন না করে মামলা করে থাকি। শতকরা কতটি মসজিদের ইমাম সাহেব ২৪ ঘন্টায় ৪মিনিট সময় ধরে আমাদেরকে ঝগড়া-বিবাদ মিমাংসা করে দেয়া কিংবা মিমাংসা করে নেয়ার গুরুত্ব বুঝিয়ে থাকেন, তাগিদ দিয়ে থাকেন ?
ঝগড়া-বিবাদ মিমাংসা করে দেয়া কিংবা মিমাংসা করে নেয়ার মধ্যেই আলো রয়েছে। আলোর অভাবেই সে জায়গাটা অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তাই মিমাংসার অভাবেই মামলা রুজু হয়ে থাকে। মিমাংসার অভাবেই মারামারি হয়ে থাকে। আগুন নিভাতে যেমনঃ পানি জরুরী, মামলার হার কমাতে মিমাংসার আলোচনা জরুরী। তাই আমি মসজিদে মিমাংসার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে আলোচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।

মসজিদে মিমাংসার গুরুত্ব যত বেশী বেশী আলোচনা করা যাবে, কোর্ট-কাছারী থেকে তত মামলার হার কমে যাবে। কোন এক বিচারককে বলেছিলাম- স্যার মামলার বিচার করে আপনারা বিচারকগণ মামলার হার কমাতে পারবেন না। আগুন দিয়ে কখনও আগুন নিভানো যায় না। এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে আমি শতাধিক প্রবন্ধ লিখেছি। অনেক প্রবন্ধ পয়সার অভাবে কম্পোজ ও করতে পারিনি।

আমরা ৯৯% নামাযীগণই জানি না যে, নামায পড়ার যতটা গুরুত্ব রয়েছে, সৎ কাজে সাধ্যমত সাহায্য করারও অনুরূপ গুরুত্ব রয়েছে। তাই আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়লেও সৎ কাজে সাধ্যমত সাহায্য করার বিষয় আলোচনাও করি না। আমার আবেদন হচ্ছে- মসজিদে সৎ কাজে সাধ্যমত সাহায্য করার গুরুত্ব বেশী বেশী আলোচনা করে সমাজে সৎ কাজের প্রসার ঘটাতে হবে।

আমরা ৯৯% নিয়মিত নামাযীগণই জানি না যে, নামায পড়ার যতটা গুরুত্ব রয়েছে - সৎ কাজে সুযোগমত উপদেশ দেয়ার ও অনুরূপ গুরুত্ব রয়েছে। অর্থাৎ নামায পড়া যেমন ইবাদত, সৎ কাজে সুযোগমত উপদেশ দেয়াও তেমনি ইবাদত। ভাই-ভাল কথা বলতে তো মুখ ব্যথা হওয়ার কথা নয়। বাংলার আবেদগণ যেন আমরা ভাল কথা বলতেও মুখে ব্যথা পাই। আবার আমরা ভাল কথা বলতে অনেকে ভয়ও পাই। যেমন আমার ছেলে ও অন্যায় করলে আমরা অনেক সময় তার প্রতিবাদ করি না। আমি পরহেজগার- মুত্তাকী অথচ আমার পুতনী আমার সামনে জিনসের প্যান্ট ও গেঞ্জি পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে রওয়ানা দিচ্ছে। হয়তোবা আমি সে গাড়ীতে উঠে পরিবহনে উঠার জন্য সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আসছি। মনে কত আনন্দ আমার পুতনির সঙ্গে গল্প করতে করতে আসলাম।

সৎ কাজে উপদেশ দিতে না পারলে মানুষকে সচেতন করা যাবে না। আর সচেতনতা ছাড়া সৎ কাজে সফলতা আসবে না। সচেতনতা কার্য্যক্রমটি সাময়িক নহে, এটা হচ্ছে সার্বক্ষণিক। সার্বক্ষণিকভাবে এ কার্যক্রমটি চালানোর জন্য আমি মসজিদ/মন্দির/গির্জাকে কাজে লাগানোর পরামর্শ প্রদান করেছি। কেননা আমরা যখন মসজিদে যাই তখন মনটা একটু নরম থাকে। নরম কাদায় যে রকম সহজে ছাপ পড়ে, নরম মনেও মোটিভেশন কার্যকরী হয়। অর্থাৎ সকল ধরনের সৎ কাজের মোটিভেশন অব্যাহতভাবে মসজিদ কিংবা মন্দির থেকে দিতে হবে।

সৎ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনা। নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনার জন্য যে প্রযুক্তিগুলো বিদ্যমান তন্মধ্যে পি,এস,এফ অন্যতম। নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনার সে প্রযুক্তি নিশ্চয় জ্ঞানের একটি অধ্যায়। মহানবী (সাঃ ) এরশাদ করেন, “ যে ব্যক্তি জ্ঞানের একটি অধ্যায় ও নিজে শিখে এবং অন্যকে শিক্ষাদান করে, তাকে সত্তরজন নবী ও সিদ্দিকীনের সওয়াব দান করা হবে।”

নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনার এ পি,এস,এফ প্রযুক্তিটি আমার জানামতে এখনও সাহিত্য আকারে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মাদ্রাসার সিলেবাসে সংযুক্ত হয়নি। আমি একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী হয়েও নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনার উপর রাত জেগে চিন্তা-ভাবনা করে চলেছি এবং সাহিত্য লিখেও চলেছি।

আমাদের স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে জ্ঞান সীমাহীন। দুনিয়ার সকল জ্ঞানী ব্যক্তিগণই স্বীকার করেছেন-আমি যা জানি তার চেয়ে অনেক, অনেক রয়েছে অজানা। একজন চিকিৎসক যেমন সকল রোগের সুচিকিৎসক নন, তেমনি একজন প্রকৌশলী ও সকল ধরনের প্রযুক্তি জানেন না। সাধারন শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের তো প্রযুক্তি জানার কথা নয়।

নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনার এ পি,এস,এফ প্রযুক্তিটিকে সার্বজনীন করতে আমি সাহিত্য রচনা করার কাজে হাত দিয়েছি। নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনার বিষয়টি একটি সামাজিক কাজ বিধায় আমি সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টিকে আমার লেখায় প্রাধান্য দিয়েছি। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা না গেলে সামাজিক কাজে সফলতা লাভ করা যায় না। সচেতনতা বৃদ্ধিতে সদুপদেশ দিতে হবে। সচেতনতা ছাড়া ও সৎ কাজে সফলতা আসে না। কেননা যারা সচেতন তারাই সচেষ্ট।

আমাদের স্মরণে রাখতে হবে যে, নামায-রোযা পালন করা যেমন ইবাদত, নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি পি,এস,এফ এ কমিটি গঠনে উপদেশ দিয়ে নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাও তেমনি ইবাদত। অথচ আমরা ৯৯% নিয়মিত নামাযীরা ও জানি না যে, নামায পড়ার যতটা গুরুত্ব রয়েছে, নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনায় মানুষকে পরামর্শ দেয়ায় ও তদপেক্ষা বেশী গুরুত্ব রয়েছে।

আমাদের স্মরণে রাখতে হবে যে, যে বিষয় যত গুরুত্বপূর্ন, সে বিষয় তত বেশী বেশী আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। লক্ষ্য করা গেছে সাধারন বিষয়ও বার বার আলোচনা করলে তার গুরুত্ব বেড়ে যায়, পক্ষান্তরে অতীব গুরুত্বপূর্ন বিষয়ও আলোচনার অভাবে, তাগিদের অভাবে গুরুত্ব কমতে থাকে। একসময় অপ্রয়োজনীয় ও মনে হতে পারে।

নিরাপদ পানির অপর নাম জীবন। দৈনন্দিন জীবনে তথা ২৪ ঘন্টায় আমরা শতকরা কত জনে আমাদের কথাবার্তায় চার মিনিট সময় ধরে নিরাপদ পানির গুরুত্ব আলোচনা করে থাকি ? যা আলোচনায় নেই তা কি করে আমলে আসে? আমাদের যাদের বোধ রয়েছে, তারা জীবন বাঁচাতে যে ধরণের প্রচেষ্টা করে থাকি সে রকমই প্রচেষ্টা করতে হবে নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে।

কথায় বলে আলোচনায় বিবেচনা বাড়ে, বিবেচনায় এক সময় বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। কেননা কলতলায় কলসী রাখতে রাখতে দেখা যায়, কলের গোড়া পাকাস্থান ও পাথর হয়ে যায়, তবে কেন বার বার বলতে বলতে বাস্তবায়ন হবে না ?

জ্ঞান চর্চা করেই জানা যাবে, নামায- রোযা পালন করা যেমন ইবাদত, তেমনি ইবাদত হচ্ছে নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনায়। পি,এস,এফ সচল রাখার জন্য সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে প্রতিটি পি,এস,এফ এ কমিটি গঠন করা। কেননা আগুন নিভাতে যেমন পানি জরুরী, পি,এস,এফ সচল রাখতে ও সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে প্রতিটি পি,এস,এফ এ কমিটি গঠন জরুরী।

তাই আসুন আমরা সকল দলমত ভূলে গিয়ে প্রতিটি মসজিদ থেকে শ্লোগান দেই- আগুন নিভানো যেমন জরুরী- পি.এস.এফ সচল রাখা ও তেমনি জরুরী। আগুন নিভানোর প্রযুক্তি যেমন পানি, পাত্র ও পরিবেশন করা – পি,এস,এফ সচল রাখার প্রযুক্তি হচ্ছে কমিটি, কন্ট্রিবিউশন ও নিয়মিত (পুকুরের পানি ঘোলা হলে সপ্তাহে একবার এবং পুকুরের পানি স্বচ্ছ হলে প্রতি মাসে একবার ) বালু পরিস্কার করা।

নামায পড়ার ক্ষেত্রে আমরা যতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকি, যার যার অবস্থান থেকে সে রকমই গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করতে থাকি- নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে। কেননা আমাদের ভূলে গেলে চলবে না, নিরাপদ পানির অপর নাম জীবন। মহান আল্লাহপাক আমাদের সহায় হউন! আমীন!
সংশোধন (০১-১২-০৮ )
প্রনয়ণে-প্রকৌশলী মোঃ আজিজুর রহমান,জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, মোরেলগজ্ঞ, বাগেরহাট। (১৫-৯-০৮)