আমি কেন সাহিত্য চর্চা শুরু করলাম ?

আমার পেশা হচ্ছে ওয়াটার- স্যানিটেশন। ওয়াটার- স্যানিটেশন হচ্ছে সামাজিক কাজ ও মানবিক কাজ। সামাজিক কাজে সফলতা লাভের জন্য সামাজিক আন্দোলন জরুরী। সামাজিক আন্দোলন করতে সাহিত্য জরুরী । সাহিত্যই পারে একটি সমাজ সংস্কার করতে। স্যানিটেশন ও সংস্কার ভাষা ভিন্ন, কাহিনী কিন্তু এক, –বলেছিলেন পাটকেলঘাটার জনৈক এ,জি,এম-পল্লীবিদ্যূৎ। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে নজরুলের কবিতা এবং রবীন্দ্রনাথের গান কত প্রেরনা প্রদান করেছিল তা বলে বা লিখে শেষ করা যাবে কি ? আমরা মুখে স্বীকার করছি স্যানিটেশনে সামাজিক আন্দোলন করা জরুরী। অথচ এ সামাজিক আন্দোলনে সহযোগিতা করতে কোন পত্রিকা এ স্যানিটেশন মাসে ও একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে কি ? স্বভাবতঃই প্রশ্ন জাগতে পারে- সামাজিক কাজের দায়িত্ব কার? সামাজিক কাজের দায়িত্ব সকল সচেতন ব্যক্তির। সচেতন ব্যক্তিই সুশিক্ষিত। সুশিক্ষিত ব্যক্তি নিজে সচেতন এবং অন্যকে সচেতন করার জন্য ও তিনি সচেষ্ট।

কোন দোকানে যেমন সকল পণ্য পাওয়া যায় না, তদ্রুপ কোন শিক্ষক ও সকল বিষয়ে সচেতন নন। সচেতন হওয়ার জন্য সনদপত্র জরুরী নয়, জরুরী হচ্ছে সচেতনতাবোধ। সচেতনতাবোধ বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। একখন্ড চুম্বকের সংস্পর্শে যেমন একটি আলপিন চুম্বকের গুণ অর্জন করতে পারে, তেমনি একজন সচেতন ব্যক্তির সোহবতে ও একজন নিরক্ষর ব্যক্তি সচেতন হতে পারে।

আমার সমস্ত লেখনীর লক্ষ্য হচ্ছে কি করে বাংলার জনগণকে সচেতন করা যায়- বিভিন্ন বিষয়ে। কেননা আগুন নেভাতে যেমন পানি জরুরী, সামাজিক কাজে সফলতার জন্য জনগণকে সচেতন করা জরুরী। গতকল্য রূপান্তর এন, জি,ও কর্তৃক আয়োজিত এক সেমিনারে এন, জি,ও কর্তৃপক্ষ তাদের আলোচনায় বলেছিলেন- আমাদের মূল কাজ সচেতনতামূলক কার্য্যক্রম। আমাদের জনগণ অসচেতন, তা এন, জি,ও কর্তৃপক্ষ বুঝে তারা আমাদের জনগণকে সচেতন করায় সচেষ্ট। অথচ আমাদের জনগণকে সচেতন করার শ্রেষ্ঠ স্থান হচ্ছে মসজিদ, সে মসজিদে সচেতনতামূলক কার্য্যক্রম নেই, আছে সওয়াব অর্জনের কার্য্যক্রম। অর্থাৎ আমরা সওয়াব অর্জনে সচেষ্ট- এন,জি,ও রা সচেতনতা কার্য্যক্রমে সচেষ্ট।

কিছুদিন আগে আশাশুনি উপজেলায় আমার আত্মীয়ের বাড়ী থেকে ভ্যানে করে ফিরছিলাম। পথে ভায়রার ভাইপোকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম-আজাদ প্রাচীর দেয়া এত সুন্দর বাড়ীটি কার? জবাবে আজাদ আমাকে জানাল -–খালু এ কারও বাড়ী নয়, এটি হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি সেবাশ্রম। তখন আমি বলে ফেললাম-মুসলমানগণ সওয়াব অর্জনে সচেষ্ট—অমুসলমানগণ সেবা দিতে ব্যস্ত। যে ভ্যানে করে ফিরছিলাম- সে ভ্যানওয়ালা তখন বলছিল-আপনি ঠিকই বলেছেন মুসলমানগণ ধর্ম নিয়ে ব্যস্ত আর অমুসলমানগণ কর্ম নিয়ে ব্যস্ত।

অথচ ইসলাম ধর্ম সৎ কর্মেরই দাওয়াত নিয়ে এসেছিল। কেননা সৎ কর্মের মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ। মহানবীর (সাঃ) ধর্মের দাওয়াতে ছিল কর্মের দাওয়াত। মহান আল্লাহপাক ও ঘোষণা করেন,“মানব জাতির কল্যাণের জন্য তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে।” নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চয় একটি সৎ কাজ। এ সৎ কাজের গুরুত্ব মসজিদ থেকে আলোচনা করতে যারা সুযোগ করে দিতে গাফিলতি করেন তারা কি বিজ্ঞ না বে- আক্কল ?

আমি বলতে চাই- সওয়াব (দোয়া দরুদ পাঠ করে কিংবা মিলাদ পড়ে ) অর্জন করা দরকার, সৎ কাজে উপদেশ দেয়া জরুরী। সওয়াব অর্জনের মূল্য হচ্ছে এক টাকা, আর সৎ কাজে উপদেশ দেয়ার মূল্য হচ্ছে লক্ষ টাকা। সওয়াব অর্জনের মূল্য হচ্ছে মার্বেলতুল্য, সৎ কাজে উপদেশ দেয়ার মূল্য হচ্ছে মূক্তাতুল্য।

শিশু যেমন মুক্তার তুলনায় মার্বেলে তৃপ্ত, বাংলার শিশু মুসল্লীগণ নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনার মত সৎ কাজে উপদেশ দিতে দু’মিনিট সময় ব্যয় করার তুলনায় সূরা হাশর পাঠ করে সওয়াব অর্জনে সচেষ্ট। যারা সওয়াব অর্জনে সচেষ্ট, তেলাওয়াতে তৃপ্ত এবং সনদপত্রে সন্তষ্ট অথচ সৎ কাজে উপদেশ দিতে ও যাদের কষ্ট- ওনারা এম,এ/কামিল/ইমাম হলে ও ওনাদের ধর্ম-কর্মে শয়তান হচ্ছে সন্তষ্ট।

আমি আমার লেখনীতে সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কেননা সচেতনতা হচ্ছে বড় সম্পদ, সচেতনতা হচ্ছে বড় শক্তি। যে সমাজে সচেতন ব্যক্তির সংখ্যা যত বেশী, সে সমাজ তত সুসভ্য, সে জাতি তত উন্নত, সে দেশ তত সমৃদ্ধ।কাজেই দেখা যাচ্ছে সু-সভ্য সমাজ গড়তে সচেতন মানুষ জরুরী। সমৃদ্ধ দেশ গড়তে ও জরুরী হচ্ছে সচেতন মানুষ। আমি আমার লেখনীতে আহ্বান জানিয়েছি-মসজিদে জ্ঞান চর্চা করে সমাজে সচেতন ব্যক্তির সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমি আমার লেখনীতে আরও উল্লেখ করেছি সওয়াব অর্জন করা দরকার, সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরী। সচেতনতা হচ্ছে বালতির তলা। তলাবিহীন বালতি যেমন কোন দিন কোন বস্তু দিয়ে ভরা যাবে না, সচেতনহীন জনগোষ্ঠীর পি,এস,এফ মেরামত করে দিয়ে ও কোন দিন সচল রাখা যাবে না।

তাই আমি বলতে চাই- জিকির করা দরকার, সূরা হাশর তেলাওয়াত করে সওয়াব অর্জন করা দরকার, জনগণকে সচেতন করে পি,এস,এফ সচল রাখা জরুরী। সূরা হাশর তেলাওয়াত করা হচ্ছে মাথায় টুপির উপর পাগড়ী পরা আর পি,এস,এফ সচল রাখার জন্য জিহাদ করা হচ্ছে পরণে পাজামা পরা।

আমরা যারা তাবলীগ করছি তারা কি পি,এস,এফ সচল রাখার মত সৎ কাজটি বাস্তবায়নে দিনে দু’মিনিট সময় ধরে প্রচার করছি ? তাগিদ দিচ্ছি? আমরা যারা ইসলামের সৈনিক তথা জিহাদে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত তারা পি,এস,এফ সচল রাখার মত সৎ কাজটি বাস্তবায়নে প্রানপণ প্রচেষ্টা করছি কি? তাগিদ দিচ্ছি কি? আমরা যারা যমানার মোজাদ্দেদ পীরসাহেবের খাস মুরিদান, চোখ বুজঁলে নূর দেখি, কল্ব জারী, তারা তাদের বাড়ীতে কিংবা মুর্শিদের দরবারে পি,এস,এফ সচল রাখার মত সৎ কাজটি বাস্তবায়নে দিনে দু’মিনিট সময় ধরে আলোচনা করে থাকি কি? তাগিদ দিয়ে থাকি কি?

তাই আসুন আমরা সকল দল ও মত ভূলে গিয়ে কিংবা যে দলেই আপনার অবস্থান হোক না কেন আপনাদের সিলেবাসে আমার এ পাঁচটি বিষয় যোগ করে নিন।
প্রনয়ণেঃ- প্রকৌশলী মোঃ আজিজুর রহমান,জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, মোরেলগঞ্জ,বাগেরহাট(১৬-১১-০৮)

0 comments: